প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত অত্র বিদ্যালয়টি ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি. তারিখে প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। এক জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্‌যাপন করা হয়েছে এই শতবর্ষপূর্তি মহেন্দরক্ষণকে। কালের পরিক্রমায় ১০০ বছর পূর্বে বিদ্যালয়টি কে বা কারা ঠিক কিভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস হারিয়ে গেছে। এলাকার বিভিন্ন প্রবীণ ভাস্য অনুযায়ী ১৯২৪ সালে তৎকালীন জমিদার বাবু নিত্য গোপাল চৌধুরি এবং তার বন্ধু নবীন চন্দ্র কুন্ডুর কয়েকজন উত্তরসুরী ডুমুরিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যলয়ের পুরনো নথি “পরিদর্শন বই” থেকে জানা যায় ১৯২৭ সালে বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিগণ পরিদর্শন করেন এবং স্থায়ী স্বীকৃতি প্রদান করেন। তবে স্থয়ী স্বীকৃতির কোন নথি বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত নেই। ধারণা করা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বা তারও পরে একাধিকবার অফিস কক্ষ পরিবর্তনের সময় এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো হারিয়ে যায়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরো যেসকল গুণী মানুষের অবদানের কথা জানা যায় তারা হলেন,

১। মোহাম্মদ কায়কবাদ হালদার
২। মোহাম্মদ মহাতাব আলী খান
৩। মোহাম্মদ মমিন আলী মোল্যা
৪। আব্দুল লতিফ জোয়ার্দার
৫। ডা. আফছার আলী শেখ
৬। মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জোয়ার্দার
৭। যোগেশ চক্রবর্তী

প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে অদ্যবধি বিদ্যালয়টি অত্র এলাকার শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিদ্যালয়টিতে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। এখানে তিনটি ট্রেডে (বিল্ডিং মেইনটেন্যন্স, জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, জেনারেল মেকানিক্স) ভর্তির সুযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে রয়েছে এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিবছর রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০০০ জন ছাত্র/ছাত্রী এবং ৩৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

বিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রাক্তণ শিক্ষার্থী যারা রাষ্ট্রয়ী গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন

১। মোহাম্মদ আবদুল গাফফার হালদার: যিনি এইচ এম এ গাফ্ফার নামে পরিচিত, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাজনীতিবিদ, খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। ১২ এপ্রিল ২০২০ খ্রি. তারিখে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
২। বাবু নারায়ণ চন্দ্র চন্দ: পিতা-স্বর্গীয় কালিপদ চন্দ, মাতা-রেনুকাবালা চন্দ। তিনি খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং প্রাক্তন মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসাবেও দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্বও পালন করেছেন।
৩। প্রফেসর ড. মোঃ মতিয়ার রহমান, এফআরসিএস: পিতা-মরহুম যশোহর আলী হালদার, মাতা-ফাতেমা বেগম। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বর্তমানে আল-বারাকা কিডনি এ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল প্রাঃ লি. কর্মরত আছেন। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানঃ বাংলাদেশ কোরআন রিচার্স ফাউন্ডেশন।
৪। প্রফেসর হাফিজুর রহমান গোলদার: পিতা-মৃত হামিদুর রহমান গোলদার, মাতা-লতিফা বেগম। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, যশোর এর চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৫। গাজী মোহম্মদ রফি: পিতা-মোঃ মতোয়ালী গাজী, মাতা-নূরজাহান বেগম। ১৯৬৯ সাল হতে ১৯৭৪ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। কর্মজীবনে প্রথমে ডুমুরিয়া সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেন। পরে চালনা সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ও তালা বিদে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০১৫ সালে তিনি মেহেরপুর জেলা শিক্ষা অফিসার হিসাবে পদন্নতি লাভ করেন। ২০১৬ সালে গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার থেকে ২০১৭ সালে পুনরায় ডুমুরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং এই প্রতিষ্ঠান থেকেই অবসর গ্রহণ করেন।

* এলাকার বিভিন্ন প্রবীণ মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই পৃষ্ঠাটি তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা বা উন্নয়নে অবদান আছে এমন কোন ব্যক্তির নাম, তথ্য প্রভৃতি আপনার জানা থাকলে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বলা হল। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে উক্ত ব্যক্তি বা তথ্য পুনরায় সন্নিবেশ করা হবে।